মাবুজ্জামান সেতু, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ
নতুন করে সরকারঘোষিত আটদিনের বিধি-নিষেধের প্রথমদিনে মান্দার সর্বত্র কঠোরভাবেই ‘লকডাউন’ পালিত হচ্ছে। এই বিধি-নিষেধ সর্বাত্মকভাবে পালনে বাধ্য করতে মান্দার পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে এ উপজেলার প্রধান সড়ক ও মোড়ে মোড়ে টহল দিচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
গেল সপ্তাহের লকডাউনের সঙ্গে আজ বুধবারের (১৪ এপ্রিল) লকডাউনের কোনো মিলই নেই। গত নয়দিন লকডাউনে রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ দেখা গেলেও আজ মানুষ নেই বললেই চলে। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হলেই পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে এ উপজেলাবাসিবাসীকে।
নওগাঁ রাজশাহী মহাসড়কের ফেরিঘাটের রাস্তায় পুলিশের টহল গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার, রিকশা, মোটরসাইকেলসহ জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহৃত সীমিত সংখ্যক যানবাহন ছাড়া তেমন যানবাহন চোখে পড়েনি। প্রায় প্রতিটি যানবাহনকে থামিয়ে থামিয়ে কী প্রয়োজনে কোথায় যাচ্ছেন তা জানতে চাইছেন পুলিশ সদস্যরা। অপ্রয়োজনে বাইরে বের হয়েছেন নিশ্চিত হলে মামলা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অাব্দুল হালিম, এসিল্যান্ড মুহাম্মদ ইমরানুল হক, মান্দা সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মতিয়ার রহমান,ওসি শাহিনুর রহমান, তদন্ত ওসি মেহেদি মাসুদ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এবার আগে থেকেই সর্বাত্মক লকডাউন বাস্তবায়নের কথা ঘোষণা দেয়ার ফলে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে এ উপজেলার বাসিন্দারা যেন হাওয়ার মতো উবে গেছেন!
আজ সরেজমিনে মান্দার সতিহাট,ফেরিঘাট, ভোলাবাজার, প্রসাদপুর,দেলুয়াবাড়ি,চৌবাড়িয়া,জোতবাজার,পাঁজরভাঙ্গা,সাবাইহাটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অধিকাংশ রাস্তাঘাটে পুলিশের টহল ভ্যান ও সাইরেন বাজিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দেখা গেছে। গতকালের (১৩ এপ্রিল) তুলনায় রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তাছাড়া রমজানের প্রথম দিন হওয়ার কারণে এমনিতেই মানুষ ঘরের বাইরে বের হননি।
মান্দার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যারিকেড দিয়ে টহল বসিয়ে যানবাহন ও যাত্রীদের জেরা করতে দেখা গেছে। তবে যারা ঘরের বাইরে বের হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছেন বলে প্রমাণ দেখিয়ে যেতে পারছেন।
মান্দার ফেরিঘাট এলাকায় কর্তব্যরতদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, সাহরির পর সকাল থেকেই রাস্তায় টহলে নেমেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কড়া নির্দেশ করোনার সংক্রমণরোধে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে রাস্তায় থাকতে দেয়া যাবে না। শুধু তাই নয়, পুলিশের বিশেষ পাস ছাড়া চলাচলে বাধা দিতে বলা হয়েছে। তবে মানবিক বিবেচনায় কিছু মানুষ যারা তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে জানেন না কিন্তু জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছেন তাদেরকে চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে।
লকডাউন চলাকালে ফলমূল ও কাঁচামাল পরিবহনের অনুমতি থাকলেও বেশ কিছু রাস্তায় পুলিশকে ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি ফিরিয়ে দিতে দেখা গেছে।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, পুলিশের বাধার কারণে তাদের অনেকটা পথ ঘুরে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
মান্দার ফেরিঘাটে অবস্থানরত মান্দা সদর ইউনিয়নের নবগ্রাম গ্রামের একজন ভ্যানচালক বলেন লকডাউনের আতঙ্কে এবং রোদ গরমের জন্যে রাস্তায় কোন লোকজন নাই,পকেটে ট্যাকা নাই,প্যাটত ভাত নাই, বাড়িত ম্যালাগুল্যা খানিয়ালা ছলপৌল। সকাল থ্যাক্যা একনো একট্যাকাও ভাড়া মারব্যা পারিনি। অাজক্যা ওজা এবং বচরক্যার পথম দিন, ভাড়া না হলে এপতারি কিনমো কি দিয়া? চাউল কিনমো কি দিয়া? মাছতরকারি কিনমো কি দিয়া? অাবার কিস্তি দিমো কোন্টে থাক্যা? এই অবস্তা চলতে থাকলে হামাকক দিনে দুপুরে চুরি লাগবে, অার না বিষ খ্যায়া মরা লাগবে তাছাড়া অার উপাই নাই। লকডাউন দিচে দিক,তাতে কোন অাপত্তি নাই; এব্যার যে চাউলের দাম। সরকার থ্যাকা হামাকক যদি এ্যানা চাউল ডাল দিলোহিনি তাও ব্যান হামরা দুড্যা বৌ বাচ্চা লিয়া খাবার পারনু হিনি। হামাকে কপালডাই খারাপ। হামাকে বাঁচা, মরা একই কতা। করোনায় হামাকে মতো গরীব দিন দিন অারো গরীব হচে।অার বড়লোকেরা দিনদিন বড়লোক হচে। থাক এগলা ছবি তুল্যা, ভিডিও অার কি করবিন বা,থাক।
কে শোনে কার কতা? কাক কমো বা এল্ল্যা দুক্কের কতা।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।